- Get link
- X
- Other Apps
- Get link
- X
- Other Apps
মিডনাইটস্ চিল্ড্রেন
সলমন রুশদি (জন্ম: ১৯ জুন ১৯৪৭)
উপন্যাসটি প্রকাশ পায় ১৯৮০-তে এবং একই সঙ্গে বিতর্ক আর প্রশংসায় রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন রুশদি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগ থেকে দেশভাগ হয়ে জরুরি অবস্থা পর্যন্ত এ দেশের ইতিহাস রুশদির এই উপন্যাসের উপজীব্য। এই উপন্যাসের সুত্রে ১৯৮১-তে সলমন রুশদি বুকার প্রাইজ পান। ১৯৯৩-তে বুকারের ২৫ বছর পূর্তিতে ফের বুকার অব বুকার্স এবং ২০০৮-এ ৪০ বছর পূর্তিতে আবারও পুরস্কার কমিটির বিচারে বেস্ট অলটাইম প্রাইজ সম্মান জোটে এই বইয়ের। পেঙ্গুইন বুকস-এর বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ বইয়ের তালিকাতেও জায়গা করে নিয়েছে উপন্যাসটি। রয়্যাল শেক্সপীয়ার কোম্পানি ২০০৩ সালে এই উপন্যাসকে ভিত্তি করে নাটক মঞ্চস্থ করেছে। চিত্রপরিচালক দীপা মেহতা মিডনাইটস চিল্ডেন অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন।
মিডনাইটস চিল্ডেন উপন্যাসটির আখ্যান বর্ণিত হয় সালিম সিনাইয়ের জবানিতে, তার ৩১তম জন্মদিবসে। শ্রোতা তার ভাবী স্ত্রী পদ্মা। সালিমের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে। সালিমের আখ্যান শুরু হয় তারও জন্মের ৩২ বছর আগে কাশ্মীর উপত্যকার পটভূমিতে, যেখানে তার পিতামহ আদম আজিজ বাস করতেন। পেশায় ডাক্তার আদম বিবাহ করেন তারই রােগিণী নাসিমকে। বিয়ের পর আদম এবং নাসিম চলে আসেন আগ্রায়। তাদের পাঁচ সন্তান জন্মায়। কন্যারা আলিয়া, মুমতাজ এবং এমারেল্ড। পুত্রদের নাম মুস্তাফা ও হানিফ। ঘটনাচক্রে আদম ইংরেজদের দেশভাগ তত্ত্বের বিরােধী নেতা মিত্র আবদুল্লার সমর্থক হয়ে ওঠেন। ঘাতকদের হাতে আবদুল্লার প্রাণনাশ হলে আদম। নিজের বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন আবদুল্লার প্রধান সহযােগী নাদির খানকে। সেই বাড়িতে থাকতে থাকতে নাদির এবং আদমের কন্যা মুমতাজের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দূজনে গােপনে বিয়েও করে। কিন্তু মুমতাজের বােন এমারেল্ড
নাদিরের খবরাখবর তার বাগদত্ত পাকসেনা অফিসার মেজর জুলফিকরকে জানিয়ে দিলে আদমের আশ্রয় ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় নাদির। স্বামী পরিত্যক্তা মুমতাজ অবশেষে রাজি হয় তরুণ ব্যবসায়ী আহমেদ সিনাইকে বিয়ে করতে।
বিয়ের পর মুমতাজের নতুন নাম হয় আমিনা। তারা চলে আসে দিল্লিতে। কিন্তু জঙ্গিদের হাতে আহমেদের কারখানা ভস্মীভূত হলে তারা ফের ঠাইনাড়া হয়ে চলে আসে বােম্বেতে। মেথওল্ড নামে ভারতত্যাগী এক ইংরেজের বাড়ি কিনে তারা বসবাস করতে শুরু করে। ইতিমধ্যে আমিনা গর্ভবতী হয়। মেথওল্ড সাহেবের পরিচারিকা তথা উপপত্নী ভনিটাও সন্তানসম্ভবা। আমিনা ও ভনিটা একই হাসপাতালে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে দুই পুত্রসন্তান প্রসব করে। কিন্তু হাসপাতালের আয়া মেরি তার সমাজবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী প্রেমিককে খুশি করতে বাচ্চাদুটির নেমট্যাগ পাল্টাপাল্টি করে দেয়। ফলে দরিদ্র ভনিটার ছেলে সালিম বড় হতে থাকে অপেক্ষাকৃত ধনী আহমেদের গৃহে আর আহমেদের ছেলে শিবার ঠাই হয় ভনিটার কুটীরে।
কৈশােরে পা দিয়েই সালিম টের স্বাধীনতার মধ্যরাতে জন্ম নেওয়া সব মানুষের মনের কথাই সে পড়ে ফেলতে পারছে। তার আশ্চর্য টেলিপ্যাথিক ক্ষমতার জোরে। এদিকে মেরি একদিন দুর্বল মুহূর্তে শিশুবদলের ঘটনা স্বীকার করে নেয়। আহমেদ সিনাই প্রচণ্ড রেগে যায় স্ত্রী আমিনার ওপর এবং হুকুম দেয় সালিমকে নিয়ে পাকিস্তানে যেতে। এদিকে পাকিস্তানে তখন আমিনার বােন এমারেল্ডের স্বামী মেজর জুলফিকার সেনা-অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করছে। পায়,
এরপর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে সালিম যােগ দেয় সেনাবাহিনীতে। পূর্ব পাকিস্তানে তখন স্বাধীনতা আন্দোলন চলেছে পুরােদমে। সাধারণ মানুষের ওপর পাক-সেনার তীব্র অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সালিম, আরও তিন সহযােদ্ধার সঙ্গে আশ্রয় নেয় সুন্দরবনের জঙ্গলে। সেখানেই সে ফিরে পায় তার স্মৃতি, কিন্তু নিজের নাম তার মনেই পড়ে না কিছুতে। জঙ্গল থেকে বেরতে তার সঙ্গে দেখা হয় স্বাধীনতার মধ্যরাতের আরেক জাতক ডাইনিবিদ্যায় পারদর্শিনী পার্বতীর। তার সাহায্যে সালিম ভারতীয় ভূখণ্ডে ফিরে আসে।
শিবা ততদিনে যুদ্ধের নায়ক। সালিম তাকে বিয়ে করবে না বুঝতে পেরে গর্ভবতী পার্বতী শিবার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে, কিন্তু সেই সম্পর্কও অচিরে ভেঙে যায়। পার্বতী সন্তান প্রসব করে মারা যায়। তার ছেলে আদম বড় হতে থাকে এক সাপুড়ে পিকচার সিংয়ের কাছে। এদিকে দেশের সরকার নিবীর্যকরণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সালিমকেও জোর করে এমনই এক ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয় এবং সালিমের টেলিপ্যাথিক ক্ষমতার জোরে নিয়ে আসা হয় স্বাধীনতার মধ্যরাতের অন্যান্য জাতকদেরও।
এই অবস্থায় ভারত-পাক যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। বােন জামিলা এবং সালিম। ছাড়া পরিবারের সকলেই সেই যুদ্ধে মারা পড়ে। সালিমেরও মাথায় আঘাত লেগে স্মৃতিশক্তি সম্পূর্ণ লােপ পায়।
ছাড়া পেয়ে সালিম পিকচার সিং আর আদমের খোঁজ করতে থাকে। তাদের পেলে তিনজনে দেশভ্রমণে বেরয়। বােম্বেতে এসে বিশেষ একধরণের চাটনি খেয়ে সালিমের মনে পড়ে যায় ধাই-মা মেরির হাতে রাঁধা চাটনির স্বাদ। খোজ করে সে জানতে পারে মেরি এখন এক চাটনি-কারখানার সালিমের জীবন যেন এইখানে এসে একটা বৃত্ত পূর্ণ করে। চাটনি কারখানার কর্মী পদ্মার প্রেমে পড়ে সালিম, যাকে সে তার উপন্যাসের আখ্যানটি বলে যায়। এবং ৩১তম স্বাধীনতা দিবসে, তথা নিজের ৩১তম জন্মদিনে পদ্মাকে সে বিবাহের প্রস্তাব দেয়।
Comments
Post a Comment